stopping birth control pills

পিল খাওয়া বন্ধ করার পর শরীরে কী কী পরিবর্তন হতে পারে, জেনে নিন

পিল বন্ধ করলে আসলে কী ঘটে? আমরা আজ জানব, পিল খাওয়া বন্ধ করার পর শরীরে কী কী পরিবর্তন হয়, সে সন্বন্ধে।

মা হতে চাওয়া যদি প্রথম পদক্ষেপ বলে ধরা হয়, তা হলে দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো : আপনারা সহবাসের সময়—যা যা প্রোটেকশন নিয়ে থাকেন, সেগুলি নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া।

এই প্রোটেকশন শুধু যে পুরুষ সঙ্গীই নিয়ে থাকেন এমনটা তো একেবারেই নয়, নারীরাও নানা উপায়ে এই প্রোটেকশন নিয়ে থাকেন।

সে হতে পারে গর্ভনিরোধক বড়ি, প্যাচ বা ভ্যাজাইনাল রিং। নারীরা যেসব প্রোটেকশন নিয়ে থাকেন, সেগুলি নানা হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে প্রেগন্যান্সি-বিরোধী আবহাওয়ার সৃষ্টি করে।

তাই এই জন্মনিরোধক ব্যবস্থাগুলি থেকে সরে এলে নারীদের শরীরও একটু খামখেয়ালি হয়ে যায়। হরমোনের মাত্রার তারতম্যে শারীরিক কিছু পরিবর্তনও দেখা দেয়।

জন্মনিরোধক (জন্মনিয়ন্ত্রণ) ব্যবস্থা নেওয়া বন্ধ করার পরবর্তী কয়েক মাস আমাদের শরীর কী কী পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়, তাই নিয়েই আজকের আলোচনা।

পিল খাওয়া বন্ধ করলে যেসব সমস্যা হতে পারে

১. ব্রণের আগমন

শুনেই যেন মনটা খারাপ হয়ে গেল, তাই না? কিন্তু কিছু করার নেই। আবার তৈলাক্ত ত্বক হলে তো হয়েই গেল!

জন্মনিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া বন্ধ করলে, শরীরে আর ওষুধের মাধ্যমে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন হরমোন যায় না।

এই হরমোন তৈলাক্ত ত্বকের সেবাম নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কম করে।

আবার জন্মনিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া বন্ধ করলে শরীরে টেস্টোস্টেরোন নামের হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়—যা ব্রণ হওয়ার জন্য দায়ী।

যতদিন না শরীরের হরমোন আবার স্বাভাবিক মাত্রায় আসবে, ততদিন মুখে বা পিঠে ব্রণের আসা যাওয়া লেগেই থাকবে।

তবে ভয় পাবেন না, সামান্য যত্ন নিলে এবং ঘরোয়া কিছু টোটকায় ব্রণের বাড়াবাড়ি আপনি চাইলে বন্ধ করতে পারেন।

২. স্পর্শকাতর ব্রেস্ট

ব্রেস্ট খুবই স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। আবার কনসিভ করার প্রথম অবস্থাতেও, এই ধরনের অনুভূতি হয়ে থাকে।

হতেই পারে সুখবর এসে গেছে! আপনি গর্ভবতী। আবার নাও হতে পারে।

শরীরের ভেতর ইস্ট্রোজেনের দাপাদাপির প্রভাবেই এমনটা হয়ে থাকে। ব্রেস্ট খুব বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়লে সবসময় একটা অস্বস্তি হতেই থাকে।

প্রয়োজনে অল্প অল্প সেঁক নিলে আরাম পাবেন, আরামদায়ক জামা-কাপড় পরুন এই সময়।

৩. যন্ত্রণাদায়ক পিরিয়ডস

এমনিতে পিরিয়ডস ব্যাপারটা মা হওয়ার সাথে যতই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকুক না কেন, পিরিয়ডস নিয়ে কোনো মেয়েরই সুখকর অভিজ্ঞতা থাকতে পারে না।

তার ওপর পেশীতে টান বা বেশি প্রবাহ তো হলে তো কথাই নেই। পিরিয়ডসের সময় প্রত্যেকেরই কম-বেশি ব্যথা হয় এবং প্রবাহের মাত্রাও সবার আলাদা আলাদা হয়।

যেসব নারীর এই পিরিয়ডসের সময় প্রবাহ বেশি হয় বা তলপেট ও কোমরে পেশীতে টান ধরে, তারা গর্ভনিরোধক যে কোনো ব্যবস্থা নিলে তুলনামূলক কম কষ্ট পান।

এই নারীরা যদি গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া বন্ধ করেন, তাদের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা আবার ফিরে আসে।

বাকিরাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিরিয়ডসের সময় প্রবাহে তারতম্য অনুভব করেন।

আবার অনেকের মুড সুইংস বেড়ে যায়, সারাক্ষণ উদ্বেগে থাকেন বা প্রায়শই মন খারাপ হয়ে থাকে। পিরিয়ডসের আশেপাশের সময়টাতে এই মুড সুইংস বেশি হয়।

৪. কমতে পারে ওজন

যেসব নারী শুধুমাত্র প্রোজেস্টিন নির্ভর গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন, তাদের ওজন কিছুটা হলেও বাড়তে পারে।

এই প্রোটেকশন নেওয়া বন্ধ করে দিলে, ওজন আগের তুলনায় কমে যায়।

৫. দ্রুত কনসিভ করতে পারেন

অভিনন্দন! এটাই তো আপনি চাইছিলেন। আপনি যতটা সময় লাগবে ভেবেছিলেন, হয়তো অত সময় লাগলোই না, আপনি কনসিভ করলেন।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ নারী—যারা গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা নিতেন, তারা ১ বছরের মধ্যেই কনসিভ করেছেন।

আবার আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া নারীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ৬ মাসের মধ্যেই কনসিভ করেছেন।

৬. পিঠে ব্যথা বা পেশীতে টান

হ্যাঁ, একটু কষ্ট হবে আপনার। এই পিঠে ব্যথা বা পেশীতে টান হওয়ার কারণ হলো : শরীর আবার ওভ্যুলেশনের জন্য নিজেকে তৈরি করে।

ওভ্যুলেশনের সময় তলপেটের একদিকে একটা জায়গায় চিনচিনে ব্যথা হতে পারে।

৭. গন্ধের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়া

বিভিন্ন গন্ধের প্রতি নাক সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র যে গর্ভবতী নারীদেরই বেশি গন্ধ লাগে, অনেক কিছুর গন্ধ সহ্য হয় না, এমনটা নয়।

যেসব নারীরা গর্ভনিরোধক অথবা পিল খাওয়া বন্ধ করার ব্যবস্থা সম্প্রতি নেওয়া বন্ধ করেছেন, তাদেরও এমনটা হতে পারে।

ওভ্যুলেশনের সময় আপনার নাকই আপনাকে জানিয়ে দিতে পারে, উপযুক্ত সময় উপস্থিত।

এই সময় সহবাস করলে কনসিভ করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হরমোনের মাত্রার তারতম্যের ফলেই এই গন্ধের ওপর সংবেদনশীলতা তৈরি হয়।

৮. যৌন চাহিদা বেড়ে যায়

গবেষণা থেকে জানা যায়, কিছু জন্মনিরোধক ব্যবস্থা যৌন চাহিদা দমিয়ে রাখে।

স্বাভাবিকভাবেই, কোনো নারী যখন ওইসব থেকে দূরে থাকেন, তখন তার যৌন চাহিদা বেড়ে যায়।

তবে এতে অসুবিধার কিছু নেই, মাতৃত্বের পথ এতে সুগমই হবে, দুর্গম হবে না।

বাইরে থেকে নেওয়া যে কোনো ওষুধ বা ইঞ্জেকশন—যা আমাদের শরীরের হরমোনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে,

সেসব নেওয়া বন্ধ করে দিলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে কিছু বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

ওষুধের প্রভাবে দমে থাকা হরমোন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে শরীরকে চালনা করার চেষ্টা করে।

এই কারণেই, বাহ্যিক উপসর্গ হিসেবে কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। নির্দিষ্ট সময় পর আবার তা ঠিকও হয়ে যায়।

সে-কারণে চিন্তার কিছু নেই। তবে শরীরে খুব অস্বস্তি হলে বা অস্বাভাবিক কিছু মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

—ডেস্ক পেরেন্টিং

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.