Hit rash

বাচ্চাদের হিট র‍্যাশ

বাচ্চাদের হিট র‍্যাশ নিয়ে আজকের আলোচনা। বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন, আপনার ছোট্ট সোনামণিকে একদিন গোসল করাতে নিয়ে হঠাৎ লক্ষ্য করলেন যে তার পিঠে এবং পেটে লাল লাল র‍্যাশ বা ফুসকুড়ির মত দেখা যাচ্ছে।

আপনি উদ্বিগ্ন হবেন—এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আপনার এটা জানা থাকা উচিত গরমকাল ছোট বাচ্চাদের জন্য খুবই বিরক্তিকর একটি সময়। কারণ এই সময়েই বাচ্চাদের শরীরে বিভিন্ন র‍্যাশ, চুলকানি, ঘামাচি ইত্যাদি দেখা দেয়।

আর এই যে লাল লাল র‍্যাশের কথা বললাম, এটা হলো বাচ্চাদের হিট র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি—যা গরমের কারণে হয়ে থাকে।

এই র‍্যাশের কারণে বাচ্চাদের প্রচুর অস্বস্তি এবং চুলকানি হয়। আপনার ছোট্ট সোনামণিকে কিভাবে এই হিট র‍্যাশ থেকে দূরে রাখবেন এবং যদি হিট র‍্যাশ হয়েও যায়, তাহলে সেটা থেকে কিভাবে নিস্তার পাবেন—তার জন্যই আজকের এই লেখা।

হিট র‍্যাশকি?

এই র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি হলো অন্যান্য র‍্যাশ এবং চুলকানির মতোই কমন এক প্রকার র‍্যাশ। এটি ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে বড়দেরও হতে পারে।

বিশেষ করে, হিট র‍্যাশ সাধারণত এমন সময়ে হয়, যখন আবহাওয়া হঠাৎ করেই ঠাণ্ডা থেকে গরম হতে শুরু করে। ত্বকের পোরগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়াই হলো হিট র‍্যাশ বা ফুসকুড়ির প্রধান কারণ।

বাচ্চাদের সাধারণত পেট, পিঠ, হাত ও ঘাড়ে হিট র‍্যাশ হতে দেখা যায়।

হিট র‍্যাশ বা তাপ ফুসকুড়ি সাধারণত চামড়ার পোর বন্ধ হয়ে যায় বলে হয়, কারণ ত্বক থেকে ঘাম ঠিকমত বের হতে পারে না, তাই ত্বকের পোর বন্ধ হয়ে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

হিট র‍্যাশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকারের উপায়

বাচ্চাদের হিট র‍্যাশ হওয়ার কমন কিছু কারণ আছে। সেগুলো হলো :

  • একটি গরম এবং আর্দ্র জলবায়ু।
  • বাচ্চাদের এমন পোশাক যা থেকে তাপ সহজে বের হতে পারে না।
  • থিক বা পুরু লোশন এবং ক্রিমের ব্যবহার।
  • একাধিক কাপড় পরিধান করার কারণে বাচ্চার শরীর অভারহিট হয়ে যাওয়া।

একটু সাবধান হলেই বাচ্চাদের হিট র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।

তার পরও যদি হিট র‍্যাশ হয়েই যায়, তাহলে ৬টি হোমমেইড রেমেডি ইউজ করে দেখতে পারেন।

এই রেমেডিগুলো কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই বাচ্চাদের হিট র‍্যাশ থেকে দ্রুত মুক্তি দেবে।

১. একটি ঠাণ্ডা স্যাঁক বা আইস ব্যাগ

যা লাগবে : একটি ঠাণ্ডা কমপ্রেস বা বরফের ব্যাগ।

যা যা করতে হবে : একটি বোলে ঠাণ্ডা পানি নিন অথবা একটি আইস ব্যাগ নিন। এবার ঠাণ্ডা পানিতে একটি পরিষ্কার কাপড় চুবিয়ে, সেটা থেকে পানি ঝরিয়ে নিন।

এবারে এই ঠাণ্ডা কাপড়টি আপনার বেবির হিট র‍্যাশ আক্রান্ত স্থানে ১/২ মিনিটের জন্য রাখুন, তার পর সরিয়ে নিন।

এভাবে কয়েকবার করুন। আর যদি আইস ব্যাগ ইউজ করেন, তাহলে আইস ব্যাগটি কয়েকবার আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন।

যতদিন ফুসকুড়ি ভালো না হচ্ছে, ততদিন এভাবে ঠাণ্ডা স্যাঁক দিতে পারেন দিনে ২-৩ বার।

এই ঠাণ্ডা কম্প্রেস বেবির র‍্যাশ আক্রান্ত স্থানকে শীতল করে এবং এফেক্টেড এরিয়াকে soothing করে। এভাবে কিছুদিন করলে ফুসকুড়ি থেকে দ্রুত নিস্তার পাওয়া যাবে।

২. অ্যাসেনশিয়াল অয়েল বা প্রয়োজনীয় তেল

যা প্রয়োজন হবে : টি ট্রি অয়েল – ১/২ ড্রপ, নারকেল তেল ২/৩ চা চামচ।

যা যা করতে হবে : ২-৩ চা চামচ নারকেল তেলের সাথে ১ বা ২ ড্রপ টি ট্রি অয়েল যোগ করুন এবং দুটি তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

এবার এই তেলের মিশ্রণ আক্রান্ত স্থানে ভালো করে মালিশ করুন এবং ২০-৩০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন, তার পর ধুয়ে ফেলুন।

যতদিন ফুসকুড়ি ভালো না হচ্ছে, ততদিন এই তেলের মিশ্রণ দিনে একবার করে ব্যবহার করতে পারেন।

টি ট্রি অয়েলে আছে প্রদাহ বিরোধী আন্টিসেপ্টিক (Antiseptic) গুণ—যা হিট র‍্যাশের জ্বালাপোড়া কমায় এবং ফুসকুড়ির অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয়।

সতর্কতা : ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের শরীরে টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করবেন না, এতে ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া এই তেল অন্য কোনো তেলের সাথে না-মিশিয়ে ব্যবহার করবেন না।

৩. শসার ব্যবহার

যা প্রয়োজন হবে : স্লাইস করা তাজা শসা।

যা করতে হবে : প্রথমে একটি কচি শসা নিন এবং এটি স্লাইস করে কাটুন। এবারে কাটা শসাগুলো পেস্ট করে নিন। তার পর এই পেস্ট আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন।

৫- ১০ মিনিটের জন্য শসার পেস্ট লাগিয়ে রাখুন, তার পর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আপনি প্রতিদিনই এই শসা পেস্ট দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন যতদিন হিট র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি থাকে।

শসাতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড (Flavonoids) এবং ট্যানিন (Tannins) নামক অ্যালার্জি এবং প্রদাহ বিরোধী উপাদান—যা হিট র‍্যাশ থেকে খুব সহজে আরাম দেয় এবং চুলকানি কমায়।

৪. ওটমিলের ব্যবহার

যা প্রয়োজন হবে : ১ কাপ ওটস পাউডার। আর, পানি।

যা যা করতে হবে : একটি বড় বোল বা বালতি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এবার এতে এক কাপ পরিমাণ ওটস পাউডার ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

তার পর এই পানিতে আপনার বেবিকে গোসল করান প্রায় ১০- ১৫ মিনিট যাবৎ। তার পর বেবির শরীর নরম তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে মুছে দিন।

আপনি প্রতিদিনই একবার করে আপনার বেবিকে ওটস পাউডার দিয়ে গোসল করাতে পারেন, যতদিন পর্যন্ত না বেবির হিট র‍্যাশ ভালো হচ্ছে।

ওটমিলে আছে প্রদাহবিরোধী উপাদান—যা চর্মরোগ সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি খুব দ্রুত চুলকানি ও র‍্যাশ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখে।

৫. ফুলার আর্থ বা মুলতানি মাটি

যা প্রয়োজন হবে : হাফ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং প্রয়োজন মতো পানি।

যা করতে হবে : হাফ টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে প্রয়োজন মতো পানি মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।

এবার আক্রান্ত স্থানে এই পেস্ট প্রয়োগ করে ১০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন, তার পর ধুয়ে ফেলুন। এই পেস্ট আপনি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।

বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মুলতানি মাটিতে থাকা নানা উপকারী উপাদান ফুসকুড়ি ও চুলকানি থেকে দ্রুত আরাম দেয়। এটি প্রাপ্তবয়স্করাও ব্যবহার করতে পারেন।

৬. অ্যালোভেরার ব্যবহার

যা প্রয়োজন হবে : ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল।

যা করতে হবে : প্রয়োজনমতো কিছু ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল নিন। এবার এই জেল শিশুর আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করে ১০-১৫ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন।

তার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই জেল আপনি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যালোভেরাতে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান—যা দেহে ঠাণ্ডা অনুভূতি প্রদান করে এবং তাপ ফুসকুড়ি থেকে দ্রুত আরাম দেয়।

প্রয়োজনীয় আরো কিছু টিপস

উপরের রেমেডিগুলো ছাড়াও আপনার বেবিকে হিট র‍্যাশ থেকে রক্ষা করতে চাইলে কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন। যেমন—

১. আপনার ছোট্ট সোনামণিকে প্রখর সূর্যের তাপ থেকে দূরে রাখুন।

২. বাচ্চাকে গরমকালে নরম ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করান।

৩. গরমকালে প্রতিদিন বেবিকে নরমাল টেম্পারেচার-এর পানি দিয়ে গোসল করান।

৪. আপনার বেবির দেহের তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। তাপ বেশি হয়ে গেলে গোসল করিয়ে দিন।

৫. পুরু লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

৬. বাচ্চার গোসলের জন্য হালকা সাবান ব্যবহার করুন।

৭. গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরম থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখতে এয়ার কন্ডিশন রুমে রাখুন বা ঠাণ্ডা রুমে রাখুন।

উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করলে আশাকরি আপনার ছোট্ট সোনামণিকে হিট র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি থেকে রক্ষা করতে পারবেন।

শুভ কামনা।

—ডেস্ক পেরেন্টিং

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.