Fertility

কীভাবে ঠিক রাখবেন শরীর, কীভাবে বাড়বে কনসিভ করার সম্ভাবনা

নারীর শরীর; যতটা কোমল, ঠিক ততটাই জটিলও বটে! আবার একটা প্রাণকে সৃষ্টি করার ক্ষমতা এই নারীর শরীরেরই আছে।

নারীর জীবনে এই সন্তান বোধ করি সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। সে আপনি যতই কেরিয়ার মনস্ক হোন বা আধুনিকা।

জীবনের একটা পর্যায়ে এসে কচি গলার ‘মা’ ডাক শুনতে ইচ্ছে হবেই আপনার। এটাই যে নারীদের ভালোবাসার ধর্ম, মাতৃত্বের ধর্ম।

কিন্তু, এ-কথা অস্বীকার করা যায় না, আপনি আজ চাইলেন, আর কাল গর্ভবতী হয়ে পড়লেন, এ-কথা নিতান্তই অসম্ভব।

জানেন কী? একটি শিশুকে পৃথিবীতে আনার আগে আমরা যেমন নিজেদের কেরিয়ার, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স ইত্যাদি নিয়ে প্ল্যান করি,

ঠিক তেমনই প্ল্যানিং দরকার নিজেদের শরীরের ভালো থাকা নিয়েও। হাজার হোক, মায়ের শরীরকে তো প্রস্তুত রাখতেই হবে আগামীর কথা ভেবে।

আবার আধুনিকা মায়েরা এখন একটু বেশি বয়সেই কনসিভ করতে আগ্রহী।

কীভাবে ঠিক রাখবেন নিজেদের শরীর আর কীভাবেই বা বাড়তে পারে কনসিভ করার সম্ভাবনা?

দেখে নিন একনজরে—

৭টি টিপস গর্ভধারণের প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ করে দেবে

১. বদলে ফেলুন জীবনযাত্রা খাদ্যাভ্যাস

জানি, আপনি প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকেন সারাটা দিন। রোজ হয়তো বাড়ির রান্না খেতে মুখেও রোচে না। কিন্তু ক্রমাগত বাইরে রেস্তোরাঁর খাবার ক্ষতি করতে পারে আপনার।

সপ্তাহে এক-দু’দিন হতেই পারে বাইরের মুখরোচক ঝাল মশলা; কিন্তু বাকি দিন অল্প তেলে রান্না করা বাড়ির খাবার খান।

শাক- সবজি, ফল, প্রাণীজ প্রোটিন, যেমন—ডিম, মুরগীর মাংস রাখুন আপনার খাদ্যতালিকায়। বেশি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাবেন না।

নিয়মিত সামান্য শরীরচর্চায় মন দিন। এতে শরীরে অবাঞ্ছিত মেদ জমবে না।

খেয়াল রাখুন, আপনার বি এম আই(BMI) যেন ১৮.৫ থেকে ২৪.৯- এর মধ্যেই থাকে। এই BMI –এর মাত্রা ৩০ এর বেশি হয়ে গেলে কনসিভ করতে অসুবিধা হতে পারে।

২. অহেতুক চিন্তা বা স্ট্রেস থেকে দূরে থাকুন

কখনো্ই মাথায় অহেতুক চিন্তা, খারাপ চিন্তা আসতে দেবেন না। সমস্ত রকম স্ট্রেস থেকে দূরে রাখুন নিজেকে।

কনসিভ করার চেষ্টা করার সময় কেন এখনো কনসিভ করতে পারলেন না, তাই নিয়ে যদি সারাক্ষণ চিন্তা বা টেনশন করেন; তা হলে কিন্তু হিতে বিপরীতই হবে।

ধৈর্য রাখুন, ঠিক সময়ের অপেক্ষা করুন। মাথায় খারাপ চিন্তা এলে বা টেনশন হলে সেগুলোকে যত জলদি পারেন তাড়িয়ে দিন।

নিজের অবসর সময়ে গাছ লাগান, মেডিটেশন করুন, দু-একটা নতুন রান্নার রেসিপি বানান বা নিজের পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান।

কিছু না হোক, নিজের সঙ্গীর সাথে আড্ডা দিন চুটিয়ে। মোদ্দা কথা, ফূর্তিতে থাকুন, নিজের মন ভালো রাখুন।

৩. শরীর সম্বন্ধে সচেতন থাকুন

গুরুত্ব দিন নিজের শরীরকে। হঠাৎ করে মোটা হতে শুরু করলে, পিরিয়ড অনিয়মিত হলে, মুখে খুব বেশি ব্রণ হলে, ক্লান্ত লাগলে বা দুমদাম মেজাজ হারালেও সেটাকে অগ্রাহ্য করবেন না।

থাইরয়েড বেড়ে বা কমে গেলে, ওভারিতে সিস্ট হলে—এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

এবং এই শারীরিক অসুবিধাগুলি কনসিভ করতে বাধা সৃষ্টি করে। শুধু এইগুলোই না, নিজের শরীরে অস্বাভাবিক যে কোনো পরিবর্তন হলে, ডাক্তারের পরামর্শ নিন ও সঠিক চিকিৎসা করান।

৪. ধূমপান নয়

ধূমপানের প্রভাবে যে কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা আশাকরি আপনি ভালোই বোঝেন এবং মজার কথা, সবকিছু জেনেও সিগারেটে দু-তিনটে সুখটান না-দিলে আপনার চলে না।

একটা সুস্থ শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চাইলে, এই অভ্যাস ত্যাগ করুন আজই। নিদেনপক্ষে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টাটা অন্তত শুরু করে দিন এখন থেকেই।

যেসব নারীরা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাদের কনসিভ করার ক্ষেত্রে প্রবল সমস্যা হয়।

৫. অ্যালকোহল আর ক্যাফেইনের টানকে বিদায় জানান

শুনতে এবং মানতে খুব কষ্ট হলেও, এই কথাটি সম্পূর্ণ সত্যি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীরা অত্যধিক কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান করেন, তাদের প্রেগন্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়।

যদি আপনি কনসিভ করার কথা ভাবছেন, তা হলে সারাদিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন শরীরে কিছুতেই ঢুকতে দেবেন না।

তা সে কফি, চা, চকোলেট যে অবতারেই থাকুক না কেন।এরকম সতর্কবার্তা কিন্তু অ্যালকোহলের ওপরও বর্তায়।

পরীক্ষালব্ধ ফল অনুসারে, যে নারী সপ্তাহে অন্তত ৪ বার অ্যালকোহল সেবন করে, তার কনসিভ করার সম্ভাবনা—যারা মদ্যপান করে না, তাদের থেকে ১৬% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

কাজেই, বন্ধ করে দিন অ্যালকোহল সেবন। ফ্রুট জ্যুস বা সফট ড্রিঙ্কসই নিন না হয়। তাতে আপনারও ভালো, আর যে সোনামণি আসবো আসবো করছে, তারও আসতে সুবিধা হয়।

৬. ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন ট্যাবলেট খান

যদি আপনি কনসিভ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকেন, তা হলে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করুন।

বি ভিটামিন ট্যাবলেট এবং ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট খেলে তাড়াতাড়ি কনসিভ করতে সুবিধা হয়।

৭. ওভ্যুলেশনের দিনগুলি হিসেব করুন

নিজের ওভ্যুলেশনের দিনগুলি হিসেবে রাখুন এবং ওই সময়ে একদিন অন্তর বা রোজ মিলিত হোন সঙ্গীর সাথে।

একটি নিয়মিত মাসিক চক্রের ১২-১৯ দিনের মধ্যে নারীদের ওভাম বা ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়। এ-সময় শারীরিক মিলন হলে কনসিভ করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।

কীভাবে ঠিক রাখবেন শরীর, কীভাবে বাড়বে কনসিভ করার সম্ভাবনা, শেষ কথা

অতএব, অহেতুক চিন্তা না-করে এই নিয়মগুলি একটু মেনে চলুন আর ডাক্তারের সাথেও পরামর্শ করুন। নিয়মিত চেক আপ করাতে ভুলবেন না যেন।

আর কেরিয়ার বা অর্থ—সব চলেই আসবে, কিন্তু বয়সটা খুব বাড়িয়ে ফেললে কনসিভ করতে গিয়ে বড্ড মুশকিলে পড়তে পারেন আপনি। সে-কারণে বিষয়টি মাথায় রাখুন।

—ডেস্ক পেরেন্টিং

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.