Baby Care

শিশুর মাথা গোল করার উপায়

শিশুর মাথা গোল করার উপায়! তাই বলে ভয় পাবার কিছু নেই। ভয়ের কোনো কারণ না-থাকলেও, বড় হয়ে কেউই চ্যাপ্টা মাথা দেখে খুশি হবে না! সে-কারণে মাথা নিটোল গোল রাখতে, সবকিছু জেনে আমাদের আজকের প্রতিবেদন।

শিশুর মাথার পেছনদিক চ্যাপ্টা হবে না আর, হবে গোলগাল।

প্রয়োজনীয় টিপস

১. ছোট্ট শিশুর মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া বা ফ্ল্যাট হেড কী?

একদম ছোট্ট শিশুদের মাথার পেছনের দিকটা বা পেছনের দিকের একটা পাশ চ্যাপ্টা হয়ে যায়।

খুব বেশি হয়ে গেলে এই চ্যাপ্টা আকার পরবর্তী সময়ে আর ঠিক হয় না।

বড় বয়সে চুলে বোঝাই হয়ে সেরকম বোঝা না-গেলেও মাথার পেছনের অংশের আসল আকার কিন্তু চ্যাপ্টাই থেকে যায়।

একেই মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া বা ফ্ল্যাট হেড সমস্যা বলা হয়।

২. শিশুর মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যায় কেন?

শিশুর জন্মের পর প্রথম ৬ মাস শিশুকে চিৎ করে শোওয়ানোই উচিত।

এভাবে ঘুমালে শিশুর অকালমৃত্যু বা সাডেন ডেথ সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেকটাই কমে যায়।

এবারে জেনে রাখুন, নবজাতকের স্কাল বা মাথার খুলি খুব নরম হয়।

এতটাই নরম হাড় দিয়ে মাথার খুলির কাঠামো তৈরি থাকে, ক্রমাগত চাপ পড়লে তা নিজের আকারই বদলে ফেলতে পারে।

শিশুর ঘাড় পুরোপুরি শক্ত হতেও প্রায় ৫-৬ মাস সময় লেগে যায়।

তাই, শিশু যখন ঘুমোয় নিজের চাহিদামতো ঘাড় ঘোরাতে পারে না, তখন যে কোনো একদিকে ঘাড় কাত করে ঘুমনোর প্রবণতা তার মধ্যে দেখা যায়।

একটি উদাহরণ : ধরুন, আপনার শিশু সারাক্ষণ বাঁদিকে ঘাড় কাত করেই ঘুমোয়।

এর ফলে মাথার বাঁদিকের স্কালের হাড়ে একটানা চাপ পড়তে থাকে এবং শিশুর মাথা বাঁদিকে চেপ্টে যায়।

ডাক্তারি পরিভাষায় এরই নাম পজিশনাল প্ল্যাজিওসেফালি। তবে, যেসব শিশুর মাথা একটু আধটু চ্যাপ্টা হয়, সেটা পরে বড় হলে ঠিকও হয়ে যায়।

৩. শিশুর মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া কী খুব ভয়ের কিছু?

একেবারেই না, শিশুর মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার মধ্যে ভয়ের কিছুই নেই। শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে কোনোভাবেই বাধা সৃষ্টি করে না।

আর চ্যাপ্টা তো ঠিক নয়, মাথার পেছনের দিকের অংশ একটু যেন টাল খেয়ে যায়।

বামদিক বা ডানদিক বা মাথার পেছনে সোজাভাবেই মাথার আকার গোল থাকে না।

ছোট্ট শিশুর যখন চুল কম থাকবে, তখন এরকম হয়ে গেলে চোখে পড়বে। ভবিষ্যতে চুলের গোছা এসে ঢেকে দেবে সোনার চ্যাপ্টা মাথা।

মূলত মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া দেখতেই খারাপ লাগে। অল্প হলে ঠিক আছে, কিন্তু খুব বেশি হয়ে গেলে পরে চুলের গোছাও ঢেকে দিতে পারে না।

তাই ছোট বয়স থেকেই তার যত্ন নেওয়াটা একান্ত দরকার।

৪. শিশুর মাথার আকার ঠিক রাখতে কী কী করতে পারেন?

পজিশন পাল্টাতে থাকুন নিয়মিত : একই দিকে রোজ শোওয়াবেন না শিশুকে। চিৎ করে শোওয়াবেন অবশ্যই, তবে মাথা যেন কোনো নির্দিষ্ট একদিকে না থাকে।

ঘুমের মধ্যেও সাইড বদল : ছোট্ট শিশুরা এমনিই অনেকক্ষণ ঘুমোয়। সেরকম হলে ঘুমের মধ্যেই শিশুর মাথা আলতো হাতে অন্য পাশে কাত করে দিন।

অনেকক্ষণ টানা ঘুমলেই এমনটা করবেন। না হলে শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

টামি টাইম হোক নিয়মিত: নিয়ম মেনে শিশুকে করান টামি টাইম। টামি টাইম নাম শুনে ঘাবড়ে যাবেন না।

শিশুকে তার পেটের ওপর উপুড় করে শুইয়ে খেলানোকেই ভালোবেসে টামি টাইম বলে।

শিশু যখন জেগে থাকবে, চনমনে থাকবে এবং ক্লান্ত থাকবে না, সেসময়টাই শিশুকে টামি টাইম করানোর উপযুক্ত সময়।

শিশুকে নিজের পেটের ওপর শুইয়ে নিন উপুড় করে। শিশুর পেট লেগে থাকবে আপনার পেটে। এবার শিশুর সাথে কথা বলুন, ওকে ডাকুন, ওর সাথে খেলুন।

এসবের প্রভাবেই শিশু ঘাড় তুলে তাকাতে চেষ্টা করবে ও ঘাড় নাড়াতে চেষ্টা করবে। আস্তে আস্তে শক্ত হতে শুরু করবে ওর নরম ঘাড়।

ঘাড় একটু শক্ত হয়ে গেলেই শিশু মাথার ভারে আর একপেশে হয়ে শুয়ে থাকবে না।

জেগে থাকলেও নজর রাখুন : শিশু যদি শুয়ে শুয়ে খেলছে বা স্ট্রলারে চেপে বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছে, নজর দিন মাঝে মাঝে।

একইদিকে মাথা পেতে রাখলে তা সরিয়ে দিন অন্যদিকে। অবশ্যই খুব সাবধানে।

ঘাড় শক্ত হতে সাহায্য করুন : শিশুর সাথে কথা বলুন, ওকে ডাকুন, ২ মাস বয়স হলেই ওকে বেড়াতে নিয়ে যান।

তা হলে শিশুও ঘাড় ঘুরিয়ে শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা করবে, নতুন জিনিস দেখতে পেলে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখবে। ঘাড়ের পেশি শক্ত হতে এসবই সাহায্য করবে ওকে।

ঘুমনোর সময় ছোট্ট মাথাটিকে নিজে নিজেই ঘোরানোর শক্তি পাবে সোনামণি।

আলতো হাতে ম্যাসাজ : অনেক শিশুর ঘাড়ের পেশি বা হাড় নমনীয় হয় না। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একদম আলতো হাতে আস্তে আস্তে ঘাড়ে ম্যাসাজ করে দিন।

কীভাবে ম্যাসাজ করবেন, দেখিয়ে দেবেন আপনার ডাক্তারই। এই ম্যাসাজ ঠিকভাবে করা হলে শিশুর ঘাড় নমনীয় হয়।

৫. পুরনো দিনের কার্যকরী টোটকা

সর্ষের বালিশ : সরষের বালিশের কথা কে না জানে? বাড়িতে একটা শিশু এলো মানেই তার জন্য সরষের বালিশ তৈরি হয়ে গেল।

সরষের বালিশ মাথায় দিয়ে শোওয়ালে শিশুর মাথার আকার চ্যাপ্টা হয় না বা এতটাই কম হয়—যা বড় হলে ঠিক হয়ে যায়।

কীভাবে বানাবেন সর্ষের বালিশ?

ছোট্ট একটা বালিশ বানানোর মতো পরিমাণে গোটা কালো সর্ষে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে শুকিয়ে নিন।

বালিশের খোল বানিয়ে নিয়ে সর্ষেগুলো ওতে ভরে দিন এবং খোলা মুখ ভালো করে সেলাই করে দিন।

পাতলা কটনের বালিশের ওয়াড় পরিয়ে দিন।

শিমুল তুলোর বিড়া বালিশ: বিড়ার মতো দেখতে হয় বলে এই বালিশকে বিড়া বালিশ বলা হয়। শিশুর মাথার আকার ঠিক রাখার জন্য এই ধরনের বালিশ খুবই উপকারী।

নরম হওয়ার জন্য শিশু খুব আরাম পায় এতে, ওর ঘাড়ও সাপোর্ট পায়।

কীভাবে বানাবেন শিমুলের বিড়া বালিশ?

বিড়া তৈরি করার জন্য লম্বা পাইপের আকারে একটা কাপড়ের খোল বানিয়ে নিন। একমুখ বন্ধ লম্বা পাইপের মতো দেখতে হবে এই কাপড়ের খোলটি।

খোল তৈরি করার জন্য নরম, পুরনো সুতির কাপড় ব্যবহার করুন।এবার খোলের ভেতর ভালো মানের শিমুল তুলো ভরে নিয়ে খোলা মুখটা সেলাই করে দিন।

এবার পাইপের মতো বালিশটা পেঁচিয়ে নিয়ে বিড়ার আকারে আনুন এবং সেলাই করে দিন।

বালিশ যেন খুব বেশি শক্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। খুব বেশি তুলো ভরবেন না একবারে।

শেষ কথা

মনে রাখুন, শিশু মানুষ : তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোও বড্ড শিশু এবং কাঁচা। টানাহেঁচড়া করতে গিয়ে সে যেন কোনোভাবেই আঘাত না পায়।

ঘাড়ের ব্যায়াম হোক বা মালিশ, বা ঘুমের মাঝে জায়গা বদল, সবটাই করুন অতি সাবধানে।

সামান্য সতর্কতা নিলেই শিশুর মাথা চ্যাপ্টা আকার নেবে না, নিলেও সেটা সেরে যাবে বয়সের সাথে।

মাথা চ্যাপ্টা নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই, তবে যদি দেখেন শিশুর ঘাড় নমনীয় নয় একেবারেই বা ঘাড় ঘোরাতে গেলে শিশুর অস্বাভাবিক কষ্ট হচ্ছে বা লক হয়ে যাচ্ছে,

সেক্ষেত্রে ডাক্তার দেখাতে দেরি করবেন না। ঘাড় শক্ত হলেই তো ছোট্ট নিটোল গোল মাথাটি ‘মাথা তুলে’ দাঁড়াবে।

—ডেস্ক পেরেন্টিং

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.